বর্তমান সময়ে আমাদের দেশে তরুণদের কাছে সবচেয়ে আলোচিত বিষয়ের একটি হচ্ছে ফ্রিল্যান্সিং। যদিও আমাদের দেশে এখনও এ বিষয়টি নতুন, কিন্তু এরই মধ্যে অনেকে ফ্রিল্যান্সিং এর মাধ্যমে নিজেদের ভাগ্যকে সম্পূর্ণরূপে পরিবর্তন করতে সক্ষম হয়েছেন। পড়ালেখা শেষে বা পড়ালেখার সাথে সাথে ফ্রিল্যান্সিং এ গড়ে নিতে পারেন আপনার ভবিষ্যৎ ক্যারিয়ার। ফ্রিল্যান্সিং হচ্ছে মাল্টি বিলিয়ন ডলারের একটা বিশাল বাজার। উন্নত দেশগুলো কাজের মূল্য কমানোর জন্য আউটসোর্সিং করে থাকে। আমাদের পার্শবর্তী দেশ ভারত এবং পাকিস্তান সেই সুযোগটিকে খুবই ভালভাবে কাজে লাগিয়েছে। আমরাও যদি ফ্রিল্যান্সিং এর বিশাল বাজারের সামান্য অংশ কাজে লাগাতে পারি তাহলে এটি হতে পারে আমাদের অর্থনীতি মজবুত করার শক্ত হাতিয়ার।
গতানুগতিক চাকুরীর বাইরে নিজের ইচ্ছামত কাজ করার স্বাধীনতা হচ্ছে ফ্রিল্যান্সিং। ইন্টারনেটের কল্যানে এখন আপনি খুব সহজেই একজন ফ্রিল্যান্সার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে পারেন। এখানে একদিকে যেরকম রয়েছে যখন ইচ্ছা তখন কাজ করার স্বাধীনতা, তেমনি রয়েছে বিভিন্নধরনের কাজ বাছাই করার স্বাধীনতা। আয়ের দিক থেকেও অনলাইন ফ্রিল্যান্সিং এ রয়েছে অভাবনীয় সম্ভাবনা। এখানে প্রতি মূহুর্তে নতুন নতুন কাজ আসছে।
যে কয়েকটি খাতে ফ্রিল্যান্সিং কাজের চাহিদা বাড়ছে তা জেনে নিন:
১. কনটেন্ট লেখা: অনেকেই ভালো কনটেন্ট লিখতে পারেন। ইংরেজিসহ যেকোনো ভাষায় ভালো মানের কনটেন্ট লিখতে পারেন, এমন কর্মীর চাহিদা রয়েছে। পেশাদার কর্মী হিসেবে ভালো কনটেন্ট তৈরি বা কোনো বিষয় তুলে ধরতে পারলে ফ্রিল্যান্সিং ক্ষেত্রে ভালো করার সুযোগ রয়েছে। দেশের প্রতিটি ছোট বা বড় ব্যবসার ক্ষেত্রেই কনটেন্টের প্রয়োজন পড়ে। তাই এ খাতে ফ্রিল্যান্সারদের জন্য বড় সুযোগ রয়েছে।
২. ডিজিটাল মার্কেটিং: স্টার্টআপ বা উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের ক্ষেত্রে ফ্রিল্যান্সারদের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। প্রতিষ্ঠানকে বাজারে তুলে ধরতে কম খরচে ডিজিটাল মার্কেটারদের খোঁজ করে অনেক প্রতিষ্ঠান। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম থেকে শুরু করে ওয়েব প্ল্যাটফর্মে প্রতিষ্ঠানকে তুলে ধরতে ফ্রিল্যান্সার ডিজিটাল মার্কেটিং কর্মীর দিকেই বেশি ঝোঁক দেখা যায়। তাই ফ্রিল্যান্সাররা এ খাতে ভালো করতে পারবেন।
৩. আর্থিক পরামর্শক: ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের আর্থিক ব্যবস্থাপনার কাজে দক্ষ ফ্রিল্যান্স কর্মীর চাহিদা বাড়ছে। বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে দক্ষ এ ধরনের কর্মীকে তাঁর অভিজ্ঞতার ওপর ভিত্তি করে ভালো পারিশ্রমিকে কাজের সুযোগ দেওয়া হয়। যাঁরা এ ধরনের পেশায় রয়েছেন, তাঁদের জন্য ফ্রিল্যান্সিং ভালো সুযোগ হতে পারে।
৪. ডেটা অ্যানালাইটিকস: ফ্রিল্যান্স পেশাদার কর্মীদের ক্ষেত্রে চাহিদাসম্পন্ন একটি দক্ষতা হচ্ছে ডেটা অ্যানালিটিকস। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের তথ্য বিশ্লেষণ করে প্রয়োজন অনুযায়ী ইনসাইট দেওয়া ও কাজে লাগানোর পরামর্শদাতাকে এখন অনেক প্রতিষ্ঠানেই নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। স্টার্টআপের ক্ষেত্রে ফ্রিল্যান্স ডেটা অ্যানালাইটিকস দক্ষ কর্মীকে নিয়োগ দেওয়ার হার বেশি। তবে বড় বড় প্রতিষ্ঠানেও এখন এ ধরনের কর্মীর চাহিদা বাড়ছে।
৫. ওয়েব ডেভেলপার: এখন ওয়েব ডেভেলপারদের চাহিদা তুঙ্গে। এখনকার বাজারে অনেকেই নতুন ওয়েবসাইট তৈরি বা যুগোপযোগী অনলাইন ব্যবসা শুরু করছেন। ফলে নতুন কোম্পানিগুলোর ক্ষেত্রে ওয়েব ডেভেলপারদের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। ফ্রিল্যান্সারদের এ খাতটিতে কাজ করার ব্যাপক সুযোগ রয়েছে।
৬. শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ: অনেক বড় বড় প্রতিষ্ঠান এখন তাঁদের কর্মীদের দক্ষতা বাড়াতে প্রশিক্ষক নিয়োগ দিচ্ছে। এ ছাড়া নিজেরও প্রশিক্ষক হিসেবে কোর্স চালু করার সুযোগও রয়েছে। অনেক প্রতিষ্ঠান এখন চাপমুক্তি, সম্পর্ক ব্যবস্থাপনা, কর্মক্ষেত্রে সুস্থ থাকার মতো নানা বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে। ফলে প্রশিক্ষক হিসেবে ফ্রিল্যান্সারদের কাজ করার সুযোগও বাড়ছে।
৭. ক্রিয়েটিভ ডিজাইন: ফ্রিল্যান্সারদের মধ্যে এখন সবচেয়ে জনপ্রিয় ক্ষেত্র হলো ক্রিয়েটিভ ডিজাইন। অনেক প্রতিষ্ঠান এখন ফ্রিল্যান্সারদের মাধ্যমে তাদের প্রেজেন্টেশন তৈরি বা ডিজাইনের কাজ করিয়ে নেয়। যাঁরা ক্রিয়েটিভ ডিজাইনে দক্ষ, তাঁরা দেশে ও দেশের বাইরে বিভিন্ন মার্কেটপ্লেসে কাজের মাধ্যমে ক্যারিয়ার গড়ে তুলছেন।
আরও রয়েছেঃ প্রোগ্রামিং, গ্রাফিক্স ডিজাইন, ওয়েবসাইট, গেম, 3D এনিমেশন, প্রোজেক্ট ম্যানেজমেন্ট, সফ্টওয়্যার বাগ টেস্টিং, ডাটা এন্ট্রি – এর যেকোন এক বা একাধিক ক্ষেত্রে আপনি সফলভাবে নিজেকে একজন ফ্রিল্যান্সার হিসেবে তৈরি করে নিতে পারেন।
জেনে রাখা ভালঃ ইন্টারনেটে অনেকগুলো জনপ্রিয় ওয়েবসাইট রয়েছে যারা ফ্রিল্যান্সিং সার্ভিস দেয় যাদেরকে বলা হয় ফ্রিল্যান্স মার্কেটপ্লেস। এগুলো থেকে যেকোন একটিতে রেজিস্ট্রিশনের মাধ্যমে আপনি শুরু করতে পারেন। এসব ওয়েবসাইটে যারা কাজ জমা দেয় তাদেরকে বলা হয় Buyer বা Client এবং যারা এই কাজগুলো সম্পন্ন করে তাদেরকে বলা হয় freelancer বা Service Provider.
জনপ্রিয় ফ্রিল্যান্সিং ওয়েব সাইট গুলো হচ্ছে:
আজ এই পর্যন্ত। আগামি পর্বে বিস্তারিত নিয়ে উপস্থিত হব।
0 Comments